ডিপ্লোমা শেষে করনীয় কি! চাকরি, বিএসসি নাকি উদ্যোক্তা!

ডিপ্লোমা শেষে করনীয় কি! চাকরি, বিএসসি নাকি উদ্যোক্তা!
Source : pixabay 

ডিপ্লোমা শেষে করনীয় কি! চাকরি, বিএসসি নাকি উদ্যোক্তা!

অনেকে ভাবেন ডিপ্লোমা তো শেষ করেছি এবার কি করবো। Bsc তে পড়বো, নাকি চাকরি করবো, নাকি নিজে কিছু একটা শুরু করবো। আমি বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, যদি আপনি এর যেকোন একটা নিয়ে পড়ে থাকেন তো জীবনে অনেকগুলো ধাক্কা খেতে চলেছেন। কারণ, প্রথমত এটা বাংলাদেশ, আর দ্বিতীয়ত আমরা  অধিকাংশ প্রায় সবাই মিডিল ক্লাস পরিবারের ছেলে মেয়ে।
চাকরি, বিএসসি, উদ্যোক্তা কোনটা করলে কি কি সমস্যা হতে পারে বা ধাক্কা খেতে হবে কেন তার কিছু বিশেষ কারন আপনাদের সাথে শেয়ার করছিঃ

সমস্যাঃ- ০১

মনে করুণ আপনি ডিপ্লোমা শেষ করে বর্তমানে আপনি BsC করছেন। আপনার পরিবার থেকে আপনার জন্য আরো অনেকগুলো অর্থ খরচ করে চলেছে। মনে রাখবেন, জীবনে সফল হতে গেলে, কষ্ট করতেই হবে। আর যারা পরিবারের টাকা পয়সা খরচ করে নিজে উপার্জনের কথা চিন্তা না করে, তারা পরে বাস্তবতার চাকায় পিষ্ট হয়ে যায়। বাবা-মা কখনো বলবেনা  তাদের টাকা দিতে কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু আসলেই কষ্ট হয়, আপনার বয়স বাড়ার সাথে সাথে এটাও বোঝা উচিত। প্রাথমিকভাবে BsC শেষে সেই কম বেতনই চাকরি করতে হবে, চাকুরী ক্ষেত্রে বর্তমানে যোগ্যতার পর দক্ষতা না থাকলে লাভ নাই। কোম্পানি তো আর আপনার আর আমার ডিগ্রী ধুয়ে পানি খাবে না।

সমস্যাঃ-০২

আচ্ছা, এবার মনে করুণ আপনি চাকুরি করছেন। সংসার চালাতে ব্যস্ত। বাবা মাকে  ভালোবাসেন। বাসায় প্রতি মাসে টাকা পাঠান। বাবা-মা খুশি, বয়স বাড়ছে, বিয়ে করার ইচ্ছে—জব নিয়েই থাকবেন। তাহলেও আপনি অনেক বড় ভুল করছেন। এখন এনার্জি আছে, পড়াশুনা করে যান। ওয়ার্ল্ড স্যাটাসে এখন স্নাতক মানে অর্নাস ছাড়া কোথাও দাম পাবেন না। চাকুরি ক্ষেত্রে একসময় একক সময় ধরে আটকে যাবেন। কারণ, প্রোমশান হবে না। তখন এনার্জী থাকবে না, থাকবে শুধু আফসোস আর আফসোস। তাই শুধুমাত্র চাকরির নিয়েও চিন্তা করলে চলবেনা।

সমস্যাঃ -০৩

আচ্ছা, যাক, যখন এত সমস্যা, তাহলে উপরের দু'টি বাদ দিলাম। BsC ও চাকরি এখন কোনটাই করবো না। নিজের একটা স্থায়ী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললেই তো সবকিছু সমাধান চলে আসে।
অ, তাই! তাহলে এবার মনে করুণ, আপনি পরিবার থেকে কিছু টাকা নিয়ে নিজে কিছু শুরু করেছেন, সবকিছু ভাল চলছে। কিন্তু একটা সময় আপনি লক্ষ্য করছেন আপনার ব্যবসা বা অফিসের পরিধিটা বাড়ছে না। কারণ, শুধুই আপনি একা একা ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছেন। এখন ব্যবসা বড় করতে হলে প্রয়োজন অনেক কর্ম - চারির।  আপনার কর্মচারী চালানোর কি কোন জ্ঞান বা পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে? উত্তরটা যদিও সহজ মনে করে হ্যাঁ বলেন, কিন্তু এটা এতো সহজ না। কেননা আপনি চাকরির জীবন ও নিয়ম সম্পর্কে কিছু জানেন না। কারণ, আপনি নিজে চাকরি করেননি। অর্থাৎ আপনাকে কেউ পরিচালনা করেনি তাহলে আপনি কিবাবে অনেক গুলো কর্মচারীদের পরিচালনা করবেন? একটি প্রতিষ্ঠান বস’রা কিভাবে সামাল দেন- তা তো দেখেননি। আপনার বড় কিছু করার জ্ঞান আছে? তার উত্তর আপনি নিজেও জানেন না। কারণ, আপনার শিক্ষা-যোগ্যতার লেভেলটা ঐ ডিপ্লোমা পর্যন্তই।
এটাও করা যাবেনা, ওটাও করা যাবেনা। তাহলে করবোটা কি? তার জন্য আমার করনীয় কি?

১নং সমস্যার সমাধানঃ-

 যদি আপনি ডিপ্লোমাতে ভালমত কাজ শিখে থাকেন, তাহলে ইন্টার্নির পরে বা ডিপ্লোমা শেষ করার পর থেকে কাজে লেগে যান। কাজ ছোট হোক বা বড় আপনার সাব্জেক্ট ও পছন্দসই চাকরি করুন। আর যদি ডিপ্লোমা কোন রকম করে থাকেন, কাজ না শিখে অবহেলা করে এসে থাকেন। তাহলে তো আবার অবহেলা না করে ডিপ্লোমা করার সুযোগ থাকল না। এখন কি করবেন? মোটামুটি ধারণা না থাকলে আপনি ভাইবাও দিতে পারবেন না। এক্ষেত্রে কিছু টাকা খরচ করে আপনার সাব্জেক্ট রিলেটেড কোর্স বা কাজ শিখে ফেলুন। কাজ না পাড়লে সার্টিফিকেট দিয়ে কিচ্ছু হবে না। এর পর চাকরির জন্য চেষ্টা করুন।
সরকারী হোক বা বেসরকারি হোক আপনি এমন চাকরি গুলোতে এপ্লিকেশন করুন যেন তারা BsC করার সুযোগ দেয় এবং আপনিও যেন চাপ না নিয়ে লক্ষ্যে এগোতে পারেন। তাই  ইন্টারনেট থেকে সার্কুলারগুলো নামিয়ে, বিএসসি করার সুবিধা বিবেচনা করে চাকরির জন্য এপ্লাই করবেন। বাসায় জব সলিউশানের বই বা কোচিং করে নিজেকে প্রস্তুত রাখবেন। স্থায়ী হোক বা অস্থায়ী সব ধরনের পোস্টেই এপ্লাই করবেন। মনে রাখবেন, সরকারী চাকুরি সোনার হরিণ, অস্থায়ী হলে পড়ে স্থায়ী করার সুযোগ বা সরকারী অন্য কোন অফিসে জয়েন করার ক্ষেত্রে পাবেন অগ্রাধিকার।
আর একটা কথা পারলে নন-ক্যাডার বিসিএস ও শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষাটা দিয়ে দেবেন। সরকারী চাকুরি আপনার জন্য তাহলে সহজ হবে।

২নং সমস্যার সমাধানঃ-

চাকরি তো পেতেই হবে। তাই মনে করলাম আপনার চাকরি হয়ে গেছে।  এবার চাকুরির পাশাপাশি পড়াশুনাটা শুরু করুন, BsC- তে ইভিনিং শিফটে ভর্তি হোন। কষ্ট করতে শিখুন, কষ্ট করলে জীবনে কখনো ঠেকবেন না। স্যারদের সঙ্গে ও ক্লাস টপারদের সঙ্গে খাতির রাখুন, পড়াশুনার প্যারা হালকা হবে। কোন মতে ৩.০০ সিজিপিএ রাখুন।
ব্যাস আপনাকে এবার বলুন আপনাকে আর ধরে ক? এখন তো আপনি নিজেই সোনার হরিণ হয়ে যাচ্ছেন। পরীক্ষার সময় রুটিন প্রিন্ট করে অফিসের বসের হাতে দিবেন আর ছুটি নিয়ে নিবেন।😝

৩নং সমস্যার সমাধানঃ-

হাস্যকর না, আপনি সত্যি এখন একজন চাকরি জিবি এবং সেই সাথে একজন  BsC Engineer.

তো এখন কি আর বসে থাকা যায়? আপনাকে আাকাশে উড়তে হবে না। পাকনা গজালে তো আপনি নিজেই উড়তে পারবেন। তাহলে আর সমস্যা কিসের? সুতরাং এখন আর বসে থাকবেন না, মানুষের জীবনের সময়টা সব সময় সমান যায় না। ব্যাপক প্লান করুণ। চাকরি  করছেন, টাকা আসছে। বিএসসি করেছেন তাই যোগত্যাসম্পন্ন হয়ে গেছেন। এতোদিন চাকরির টাকা দিয়ে বিএসসি করেছেন এবার চাকরির টাকার ঐ অংশটি ব্যক্তিগত ব্যসার কাজে ব্যয় করুন। আস্তে আস্তে শুরু করুন নিজের একটা প্রতিষ্ঠান। কোন চিন্তা ব্যতিত নিজের কোম্পানির স্বপ্ন গুলোর পেছনে খরচ করুন। দেখবেন শুধু দেখেই যাবেন। আপনি কেমন যেন জাদুর মত কাজ করছেন। যা ধরবেন সেখানে ফল ফলবে - ইনশাআল্লাহ।


Post a Comment

0 Comments